সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব সংবাদদাতা : জামালপুর সদর উপজেলার ৫ নং ইটাইল ইউনিয়নের দমদমা বোয়ালমারি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হালিম মিলনের কলেজ পড়ুয়া কন্যা ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও শনিবার (৩ মে ) পর্যন্ত মামলা নেয়নি জামালপুর সদর থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী তরুণীর অভিযোগ, জামালপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু মামলা নিতে ‘টালবাহানা’ করছেন জামালপুর থানার ওসি
মোহাম্মদ মহব্বত কবির।
নরুন্দি পুলিশ ফাঁড়ীর এসআই আসাদ প্রতিদিনের কাগজকে জানান, থানা থেকে আমার কাছে অভিযোগ পাঠিয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। মামলা করার কি প্রয়োজন। তরুণী ন্যায় বিচার পাবে না। আপোষ হওয়াটাই ভাল।
আইনজীবীরা বলছেন, ধর্ষণ ও গর্ভপাতের মতো গুরুতর অভিযোগে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরও মামলা রেকর্ড না হওয়া আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ পুলিশের কাছে পেশকৃত সব মামলা প্রথম দৃষ্টিতে মিথ্যা বা সত্য, গুরুতর কিংবা সাধারণ দণ্ডবিধির অধীনে শাস্তিযোগ্য, যাই হোক না কেন তার এফআইআর গ্রহণ করার বিধান রয়েছে। মামলা রেকর্ড না করে পুলিশ রেগুলেশনস ভঙ্গ করেছেন ওসি মোহাম্মদ মহব্বত কবির।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তগণীর বাড়িতে রান্নাঘরে তরুণীর ইচ্ছা বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষণের
শিকার হন। পরে গর্ভবতী হলে অভিযুক্ত
একই গ্রামের আব্দুল হান্নান এর পুত্র জাকিরুল ইসলাম জুয়েল ময়মনসিংহ আইডিয়ার নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। তিন দিন ভর্তি রেখে তাকে গর্ভপাত করানো হয়। তারপর অভিযুক্ত জুয়েল ও তার পরিবার তরুণীকে বিয়ের আশ্বাস দেন। বিয়ে না না করে তরুণী ও তার পরিবারকে এলাকা ছাড়া হুমকি দিচ্ছেন।
অভিযোগ আছে, অভিযুক্ত জুয়েলের দুই মামা পুলিশের দারোগা, এর প্রভাব বিস্তার করার কারনে থানায় মামলা রেকর্ড করছে না পুলিশ।
তরুনী জানান, আমার বাবা ও খালুকে নিয়ে জামালপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসি এরপর দিন এসআই আসাদ স্যার তদন্তে আসে। তিনি এসে বলে যান মামলা হবে। আসামিকে খোঁজছেন। ধরতে কিছু টাকা লাগবে। মীমাংসা হওয়াটাই ভালো। এটা অনেক আগের ঘটনা। প্রমাণ হওয়ার সম্ভাবনা নাই। কিন্তু ঘটনার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নথিভুক্ত করেনি ওসি। তরুণী বলেন,অভিযুক্ত পরিবার এখন হুমকি দিচ্ছে । অভিযুক্তের বাবা হুমকি বলেন,আমার দুই শ্যালক দারোগা। ওসি মামলা নিবে না। এসআই আসাদ আমাদের লোক।
তরুণীর খালু রউফ বলেন, ৫ দিন ধইরা শুধু থানায় হাঁটতাছি। লিখিত অভিযোগ নিয়ে ওসি দারোগা পাঠাইছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত মামলা নেয় নাই। আজ (শুক্রবার ) সকালে আবার থানায় ডাকছেন দারোগা।
অভিযুক্ত জুয়েলের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরও মামলা রেকর্ড না করে ওসি আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে জানিয়েছেন
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এড. সন্তোষ কুমার সরকার। তিনি বলেন, ‘এই মামলা না নেওয়া একটি ফৌজদারী অপরাধ। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী যার শাস্তি তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা তিন মাসের বেতন জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।
এ ব্যাপারে জামালপুর সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহব্বত কবির বলেন, ঘটনাটি আগের। কাছাকাছি সময়ের কোন ঘটনা নেই। অভিযোগ আমি পেয়েছি। আমি এসপি স্যারের সাথে কথা বলেছি। মেডিকেলে কিভাবে প্রমান হবে? তারপরও তদন্ত করছি। দেখি কি করা যায়। তবে অভিযুক্তের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি।
ওসির এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বলেন, ‘আমি নিজে মেয়ের লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় গেছি। ওসি স্যারকে জমা দিছি। এরপর দিন থানা থেকে দারোগা আসাদ স্যার বাড়ি আসছে।কিন্তু মামলা হয় নাই। কবে হবে তাও জানি না। আমার মনে হচ্ছে জামালপুর সদর থানায় আমি ন্যায় বিচার পাবো।